পথে-ঘাটে চাঁদাবাজি, হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়, বন্যা ও পশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে এবারের ঈদুল আযহায় পশুর দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

একটি গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র সচিবকে এ তথ্য জানিয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অতিরিক্ত দামে কোরবানির পশু কেনার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ত্বক নিয়ে কিছু সংকটের কথা বলা হয়েছে।

 


গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা শিগগিরই বৈঠক করব। একজন উপসচিব প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করছেন। তবে এবার আর পশুর সংকট হবে না বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আমরা দেখছি কিভাবে অন্যদের পরিচালনা করা হবে. এছাড়া চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য বিষয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখবে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও চামড়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। চামড়া সংরক্ষণে যাতে কোনো সংকট না হয় সেজন্য আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়কে দেড় লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছি। চামড়া পরিবহনে যাতে কোনো সংকট না হয় সেদিকেও নজর দেব।

 

গত ২৩ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, গত পাঁচ মাসে সব ধরনের পশু ও হাঁস-মুরগির খাবারের দাম ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে কৃষকদের বাড়াতে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এতে আসন্ন কোরবানির ঈদে পশুর দাম বাড়তে পারে। এতে কোরবানির পশুর বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। বাজার তদারকির মাধ্যমে পশুখাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে এবং দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা না গেলে কোরবানির হাটে পশুর সংকট দেখা দিতে পারে। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, কোরবানির পশু পরিবহনে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি হয়, স্থায়ী ও অস্থায়ী কুঁড়েঘরের মালিকরা অযৌক্তিক মুনাফা আদায় করে। এই বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে.

 

করোনা মহামারী, বিভিন্ন দেশে কাঁচা পশুখাদ্যের উৎপাদন কমে যাওয়া এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে সামগ্রিকভাবে পশুখাদ্যের দাম বেড়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পশুখাদ্যের অন্যতম উপাদান হল গম, ভুট্টা, ধানের তুষ, সয়াবিন খাবার, সরিষার তেল, ময়দা ইত্যাদি। এর মধ্যে বাংলাদেশের পশুখাদ্য কোম্পানিগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গম, ভুট্টা ও সয়ামিল আমদানি করে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে বেশি ভুট্টা আমদানি করেন। বাংলাদেশও গম আমদানিতে এই দুই দেশের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু যুদ্ধের কারণে ফেব্রুয়ারি থেকে দুই দেশের আমদানি বন্ধ রয়েছে। ফলে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে। পরিবহন খরচও বেড়েছে। এ কারণে পশুখাদ্য উৎপাদনের খরচও বেড়েছে।

 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা জানান, এ বছর এক কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজারের বেশি কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে। গত বছর 1.19 কোটি গবাদি পশু প্রস্তুত ছিল, যার মধ্যে প্রায় 91 লাখ গবাদি পশু কোরবানি হয়েছিল। আমরা গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি ত্যাগ আশা করছি কারণ চলাচলে কোনো বাধা নেই। এবার ৪৭ লাখ গরু-মহিষ, ৭৫ লাখ ছাগল ও ১৪ হাজার অন্যান্য পশু রয়েছে। ফলে পশুর সংকট হবে না।

 

হাটগুলোতে চাঁদাবাজিসহ বাড়তি মাশুল নেওয়ার কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? জানতে চাইলে ডা. শাহজাদা বলেন, ‘সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমরা একাধিকবার দেখা করেছি। গবাদি পশু পরিবহন যাতে দ্রুত চলতে পারে সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

 

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান বলেন, আমরা কয়েকদিন আগে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে বৈঠক করেছি। সেখানে মন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। আমি সেখানে কিছু সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়েছি। এতে পশুর ট্রাক দ্রুত চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি রোধে উদ্যোগ নিতে হবে। কেউ খামার থেকে পশু কিনলে তার কাছ থেকে কোনো চার্জ নেওয়া যাবে না। পশু যে হাটে নিতে চাই সেখানে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। অনেক ভাড়াটিয়া জোরপূর্বক কৃষকদের ট্রাক তাদের বাজারে নিয়ে যায়। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমি পশুর ট্রাক টোলমুক্ত করারও প্রস্তাব করেছি।

 

এখন দাম বাড়ার আশঙ্কা কেন? জবাবে ইমরান বলেন, দাম বাড়বে। গত এক বছরে পশুখাদ্যের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে, যে কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এবারও গরুর দাম ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়বে। আর চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য খরচ বাড়লে পশুর দাম আরও বাড়বে।

 

এদিকে সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক বন্যায় গবাদিপশুর খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গরুর খাদ্যের দাম বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়তে পারে কোরবানির পশুর বাজারে। সিরাজগঞ্জ দেশের অন্যতম চরাঞ্চল। এবারও বন্যা হয়েছে।

 

বুধবার এক অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি।